সবে বরাত, করনিয়ো বর্জনিয়ো

লিখেছেন লিখেছেন জিহর ০১ মে, ২০১৮, ০৭:২৭:৪৯ সন্ধ্যা

শবে বরাতে করণীয় ও বর্জনীয়!

করনীয় রয়েছে কি কি?

শবেবরাতের করণীয় সম্পর্কে হজরত রাসুলে আকরাম

(সা.) ইরশাদ করেন, ১৪ শাবানে তোমরা রাত জেগে

ইবাদত করবে এবং পরদিন রোজা রাখবে। এই হাদিস

থেকে জানা যায়, শবেবরাত উপলক্ষে করণীয় দুটি।

এক. রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করা। যেমন_নফল

নামাজ, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ-তাহলিল,

দোয়া-দুরুদ, তওবা-ইস্তেগফার ইত্যাদি।

দুই. পরদিন রোজা রাখা। এমনিতে সারা শাবান মাসেই

অধিক হারে রোজা রাখা উত্তম। হজরত মুহাম্মদ (সা.)

প্রায় সারা শাবান মাসেই রোজা রাখতেন। হজরত উম্মে

সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হজরত

রাসুলকে শাবান ও রমজান ছাড়া দুই মাস একাধারে

রোজা রাখতে দেখিনি। (তিরমিজি ১/১৫৫)।

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি হজরত নবি করিম (সা.)-

কে শাবান মাসের মতো আর কোনো মাসে এত অধিক

(নফল) রোজা রাখতে দেখিনি। এ মাসের কয়েক দিন

ছাড়া সারা মাসটাই বরং বলতে কী গোটা মাসটাই

তিনি রোজা রাখতেন। (তিরমিজি ১/১৫৫, বুখারি ১/২৬৪)



আবার ১৪ শাবান থেকে রমজান পর্যন্ত নফল রোজা

রাখার নিষেধও একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, শাবানের অর্ধাংশ যখন বাকি

থাকে, তখন আর তোমরা রোজা রাখবে না। (তিরমিজি

১/১৫৫)।

বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম বলেন, শাবান মাসটি

রমজানের পূর্ববর্তী মাস হওয়ার কারণে বরকত ও পুণ্যময়

একটি মাস, এ জন্য অন্তরকে পরিচ্ছন্ন করা এবং

রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের উদ্দেশ্যে রাসুল (সা.) এ

মাসে অধিক হারে রোজা রাখতেন। কিন্তু উম্মতের

প্রতি একান্ত দয়াপরবশ হয়ে নবি (সা.) শাবানের

শেষার্ধে নফল রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। এ জন্য

বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম বলেন, যেসব লোক দুর্বল

হওয়ার কারণে রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে যায়, তাদেরই

উপরোক্ত হাদিসে শাবানের শেষার্ধে রোজা রাখতে

নিষেধ করা হয়েছে। যেন তারা এ ১৫ দিন খেয়েদেয়ে

রমজানের রোজার জন্য শক্তি সঞ্চয় করে এবং

প্রফুল্লচিত্তে রমজানের রোজা রাখতে পারে। (লুমআত)

। বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) প্রতি

মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে তিনটি রোজা রাখতে

উৎসাহী করেছেন। সে হিসেবেও ১৫ শাবানের রোজা

নফল রোজা সাব্যস্ত হয়। এবং এর সঙ্গে ১৩ ও ১৪ শাবান

আরো দুদিন যোগ করে মোট তিনটি রোজা রাখাই বরং

উত্তম। হজরত আবুজর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

হজরত রাসুলে (সা.) বলেছেন, কেউ যদি প্রতি মাসে তিন

দিন রোজা রাখে, তবে তার যেন সারা বছরই রোজা

রাখা হলো। এর সমর্থনে মহান আল্লাহ তাঁর কিতাবে

আয়াত অবতীর্ণ করলেন_কেউ যদি একটি নেক কাজ করে,

তবে তার প্রতিদান হলো এর ১০ গুণ। সুতরাং এক দিনের

রোজা ১০ দিনের সমান। (তিরমিজি-১/১৫৯)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

হজরত রাসুল (সা.) আমাকে তিনটি ওসিয়ত করেছেন।

বিতর আদায় না করে যেন আমি না ঘুমাই, প্রতি মাসে

যেন তিন দিন রোজা রাখি এবং চাশতের নামাজ আদায়

করি। (তিরমিজি-১/১৫৯)।

হজরত আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত

রাসুল (সা.) তাঁকে বলেছেন, হে আবু জর! প্রতিমাসে যদি

তিন দিন রোজা রাখতে চাও তবে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে

রোজা রাখবে। (তিরমিজি-১/১৫৯)।

বর্জনীয় কি কি?

শবে বরাতে কবরস্থানে যাওয়াটাকে রেওয়াজে পরিণত

করা ঠিক নয় : একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুল

(সা.) শবেবরাতে জান্নাতুল বাকিতে জিয়ারতের

উদ্দেশ্যে গিয়েছেন। এ জন্য সম্ভব হলে শবেবরাতে কবর

জিয়ারতও করা উচিত। অন্যথায় ঘরে বা মসজিদে বসেই

মৃতদের জন্য দোয়া করা উচিত। হজরত আয়েশা (রা.)

বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) আমার কাছে এসে নিজের

পরনের অতিরিক্ত পোশাক খুলে ফেললেন। একটু পর

আবার তিনি পোশাক পরে নিলেন। আমার ধারণা হলো,

তিনি তাঁর অন্য কোনো স্ত্রীর কাছে যাচ্ছেন। আমার

আত্মমর্যাদাবোধ জেগে উঠল। আমি তাঁর পেছনে পেছনে

চললাম। দেখি কী তিনি জান্নাতুল বাকিতে মুসলমান

নর-নারীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। আমি মনে

মনে বললাম, তাঁর ওপর আমার মাতা-পিতা উৎসর্গ হোন,

তিনি তো আল্লাহর কাজে লিপ্ত আর আমি পার্থিব

কাজে। আমি সেখান থেকে নিজ কক্ষে ফিরে এলাম।

আমার শ্বাস-প্রশ্বাস ঊর্ধ্বগামী হলো। ইতিমধ্যে হজরত

নবি করিম (সা.)ও ফিরে এলেন। আমার শ্বাস-প্রশ্বাস

ঊর্ধ্বগামী হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলেন, আমি ঘটনা

খুলে বললাম। হজরত রাসুল (সা.) বললেন, হে আয়েশা!

তোমার কি আশঙ্কা ছিল আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তোমার

প্রতি কোনো অবিচার করবেন? আসল কথা হলো, হজরত

জিবরাঈল আমার কাছে এসে বললেন, আজ ১৪ শাবান

রাত। এ রাতে আল্লাহ তায়ালা বনু কালব গোত্রের

বকরিগুলোর পশম সমপরিমাণ লোককে ক্ষমা করে

থাকেন। (বায়হাকি, শুয়াবুল ইমান-৩/৩৮৪)। তবে

শবেবরাতে কবরস্থানে যাওয়াটাকে কোনো রেওয়াজে

পরিণত করা বা দলবেঁধে যাওয়া ঠিক নয়। প্রত্যেকে

নিজ নিজ সুযোগমতো চলে যাবে।

ইসলামে এ রাতের ইবাদতের জন্য বিশেষ নিয়মনীতি নেই

: তবে এ-ও সত্য, ইসলামে এ রাতের ইবাদতের জন্য কোনো

বিশেষ নিয়মনীতি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। যেমন_

আমাদের মধ্যে অনেকে শবেবরাতের জন্য আলাদা

নামাজ আছে বলে মনে করেন। তাঁরা মনে করেন, এই

নামাজের নিয়মনীতিও সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। যেমন_প্রথম

রাকাতে অমুক সুরা পড়তে হবে, দ্বিতীয় রাকাতে অমুক

সুরা পড়তে হবে। এ-জাতীয় ধারণা অবশ্যই ভিত্তিহীন।

যত দূর সম্ভব নফল ইবাদত, নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত,

ফিকির, তাসবিহ-তাহলিল ও দোয়ার মধ্য দিয়ে এ রাত

কাটানো ফজিলতের বিষয় বটে।

মোটেই হৈ চৈ বা আনন্দ-উল্লাসের রাত নয় এটি…:

আমাদের আরেকটি বিষয় অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে,

ইসলামে যেসব রাতের ফজিলত রয়েছে, সেই ফজিলতের

ভিত্তি ইবাদত-বন্দেগি। এ রাতগুলো মোটেই হৈচৈয়ের

রাত নয়। হালুয়া-রুটি কিংবা সম্মেলনের রাত মোটেও

নয়। বরং এগুলো একান্ত নির্জনে বসে মহান আল্লাহ

রাব্বুল আলামিনের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার রাত। নফল

ইবাদত নির্জনে একাকী করাই উত্তম। হজরত রাসুল (সা.)

নফল নামাজ বাড়ি-ঘরে নির্জন-নিভৃতে আদায় করার

নির্দেশ দিয়েছেন।

ফরজ ছাড়া অন্য সব নামাজই বাড়িতে নির্জনে একাকী

আদায় করাই উত্তম : এক হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ

করেছেন, ফরজ ছাড়া অন্য সব নামাজই বাড়িতে

নির্জনে একাকী আদায় করাই উত্তম। সুতরাং

শবেবরাতের নামাজও যেহেতু নফল, সেহেতু বাড়িতে

আদায় করাই উত্তম। মসজিদে ভিড় করার কোনো

প্রয়োজন নেই। অনেকে এ রাতে আতশবাজি,

আলোকসজ্জা, শোরগোল ও হৈচৈ করে থাকেন। উৎসবে

মেতে ওঠেন। এটা সম্পূর্ণ হারাম, বিদয়াত। এ রাত তো

কোনো আনন্দ-উৎসবের রাত মোটেই নয়। অধিকন্তু এসব

অপচয় ও বাড়াবাড়িও বটে, যা কবিরা গুনাহ। পবিত্র

শাবান মাস ও শবেবরাত অধিক ইবাদতের উর্বর মৌসুম।

হজরত রাসুল (সা.) পবিত্র শাবান মাসে অন্য মাস

অপেক্ষা অধিক রোজা রাখতেন। শাবান মাস ও

শবেবরাত কোনো আনন্দ-উৎসবের সময় নয়। অনাকাঙ্ক্ষিত

লৌকিকতা, উন্মত্ততা, উৎসব প্রবণতায় শাবান ও

শবেবরাতের প্রকৃত আবেদন এবং পবিত্রতা নষ্ট হয়।

আমরা যদি এ ব্যাপারে এখনই সতর্ক না হই, তাহলে

পবিত্র শবেবরাত পূজামণ্ডপের মতো নিছক

আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত হবে। অন্তসারশূন্য হয়ে পড়বে।

লোপ পাবে কাঙ্ক্ষিত রুহানিয়াত ও আত্মিকতা।

বিষয়: বিবিধ

৬৩৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385233
০১ মে ২০১৮ রাত ০৯:৫০
আমি আল বদর বলছি লিখেছেন : শবে বরাতের আরবি নাম কি এবং কুরআনে কি শবে বরাতের কথা বলা হয়েছে দলিল দিবেন আশা করি

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File